পশ্চিমবঙ্গ সংবাদদাতা : ফের রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়ের নিশানায় পশ্চিমবাংলার সরকার। স্বভাবসুলভ ঢঙে শুক্রবার রাজ্যপাল বলেছেন, নির্বাচনের আগে বিভিন্ন জায়গায় যে সব হিংসার ঘটনা ঘটে, তা কাম্য নয়। শুধু তাই নয়, রাজ্যপালকে ধারাবাহিক ভাবে অসম্মান করা হচ্ছে বলেও তিনি রাজ্য সরকারের কড়া সমালোচনা করেন। এমনকী, টুইট করেও রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানান। এর পরই এদিন মুখ খোলেন রাজ্যের মন্ত্রী ব্রাত্য বসু। রাজ্যপালকে সরাসরি তিনি ‘নৈরাজ্যপাল’ বলে উল্লেখ করেন।
এদিন মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর জন্মদিন উপলক্ষে ব্যারাকপুরের গান্ধীঘাটে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। করোনা পরিস্থিতিতে অনেকটাই সংক্ষিপ্তাকারে এদিনের অনুষ্ঠান হয়। সেই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কাছে এলেই বিভিন্ন জায়গায় হিংসা শুরু হয়ে যাওয়াটা যেন এখন স্বাভাবিক হয়ে যাচ্ছে। এটা কাম্য নয়। এর ফলে মানুষের মঙ্গল হয় না।’ তার পরই তিনি সরাসরি আক্রমণ করেন রাজ্য সরকারকে। তিনি বলেন, ‘এই রাজ্যের সরকার সংবিধানকে অপমান করছে। রাজ্যপালকেও অসম্মান করছে। অপমান করছে। তার মানে ব্যাপারটা রাজভবনেরও অপমান।’ ওই অনুষ্ঠানেই রাজ্যের সমালোচনায় ইতি টানেননি তিনি। এর পর টুইট করেও রাজ্য সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন।
এদিনের অনুষ্ঠানে রাজ্যের তরফে যোগ দিয়েছিলেন দমদমের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী নাট্যকার ব্রাত্য বসুও। সেখানেই একটি ঘটনা ঘটে বলে পরে সাংবাদিকদের জানান ব্রাত্যবাবু। তাঁর থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়েছিলেন রাজ্যের নতুন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন। তাঁদের মধ্যে কী কথা হয়, তা অবশ্য জানা যায়নি। ঘটনাটি মন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে যথেষ্ট বিরক্ত করেছে। সেই অসন্তোষ তিনি গোপনও রাখেননি। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি সরাসরি রাজ্যপালকে ‘নৈরাজ্যপাল’ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘তিনি কী সব ভাসা–ভাসা, ঘোলা–ঘোলা কথা বলছেন। তিনি রাজনৈতিক মুখপাত্র হিসাবে যা যা বলার, সে সব তো বলেই চলেছেন।’ পাল্টা সমালোচনা করে রাজ্যপাল বলেছেন, ‘রাজভবনকে বাদ দিয়ে আত্মসমীক্ষা করা উচিত সরকারের। রাজ্যপালকে অপমান করা মানে ভারতের সংবিধানকেই অপমান করা।’
উল্লেখ্য, এতদিন রাজ্যপালের সমালোচনার প্রত্যুত্তরে রাজ্যের হয়ে মুখ খুলতেন মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম। এমনকী, কয়েকদিন আগে রাজ্যের হয়ে রাজ্যপালের সমালোচনা করেন সাংসদ সৌগত রায়, মহুয়া মৈত্র এবং নুসরত জাহানও। কিন্তু কখনও মন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে রাজ্যপালের সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠতে দেখা যায়নি। তাই এদিন ব্রাত্য বসুর মতো মন্ত্রী তথা সংস্কৃতি জগতের একজন প্রতিনিধির এ ভাবে রাজ্যপালের সমালোচনা করার ঘটনাকে যথেষ্ট ইঙ্গিতবহ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। এদিন ব্রাত্য বসুর সমালোচনার ভাষা সংযত হলেও ছিল যথেষ্ট কড়া। তবে তৃণমূলের অন্য মন্ত্রী বা সাংসদদের মতো রাজ্যপালের বিরুদ্ধে লাগামহীন আক্রমণ করেননি তিনি।
অন্যদিকে, উত্তরপ্রদেশে যোগী আদিত্যনাথের সরকার সেখানকার বাঙালিদের দুর্গাপুজো করার অনুমতি দিয়েছে। এর আগে করোনা পরিস্থিতির কারণ দেখিয়ে সার্বজনীন উৎসব করার পরিবর্তে দুর্গাপুজো বাড়িতে করার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। অথচ রামলীলা উৎসবের সার্বিক অনুমতি দিয়েছিলেন তিনি। ওই ঘটনা নিয়ে চারদিকে যোগী সারকারের সমালোচনা শুরু হয়ে যায়। এমনকী, বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত টুইট করে নিজের অসন্তোষের খবর জানিয়ে দেন। তার পরই যোগী আদিত্যনাথের সরকার আর বিতর্ক না বাড়িয়ে দুর্গাপুজোর অনুমতি দেয়। তবে করোনা সংক্রান্ত সামাজিক ও স্বাস্থ্য বিধি মেনে সমস্ত উৎসব করতে হবে বলে সরকার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে।